IQNA

ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ পরস্পর বিরোধী সত্ত্বেও ভয়ঙ্কর অপপ্রচারে পশ্চিমা গণমাধ্যম

23:51 - October 03, 2018
সংবাদ: 2606886
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার পর থেকে ইসলাম অস্ট্রেলিয়ার সামাজিক এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ পরস্পর বিরোধী সত্ত্বেও ভয়ঙ্কর অপপ্রচারে পশ্চিমা গণমাধ্যম

বার্তা সংস্থা ইকনা:দেশটি মুসলিম অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অতি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ফ্রাসের আনিং দেশটির আইনসভায় মুসলিম বিরোধী একটি বক্তব্য দিয়েছেন যার ফলে অনেকেই ধারণা করছেন যে, সবাইকে ‘ইসলাম’ ধর্মের নাম করে আরেকটি সন্ত্রাসী আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।

বাস্তবতা হচ্ছে গণমাধ্যমগুলো এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং আমরা কিভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাবো তা ঠিক করে দেয়। কিন্তু এসব গণমাধ্যম যে বিষয়টি এড়িয়ে যায় তা হচ্ছে- ইসলাম ধর্ম সন্ত্রাসবাদে মদত দেয় না বরং সন্ত্রাসবাদে মদত দেয় ইসলামইজম যা একটি রাজনৈতিক আদর্শ।

এই দুটি বিষয় শুনতে একই মনে হয়। তবে ইসলাম এবং ইসলামইজম দুটো আলাদা বিষয়। ইসলাম হচ্ছে বিশ্বব্যাপী ১.৬ মিলিয়ন মানুষের পালন করা একটি ধর্ম, অন্যদিকে ইসলামইজম হচ্ছে এমন একটি রাজনৈতিক আদর্শ যা ‘শরিয়া’ এবং ‘জিহাদ’ এসব বিষয়কে লালন করে।

গণমাধ্যমগুলো যেভাবে সন্ত্রাসবাদকে বৈধতা দিয়ে থাকে

ইসলামপন্থী দল যেমন আল-কায়দা এবং ইসলামিক স্টেট অমুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে চায় যাতে করে তারা ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তবে তাদের এধরনের কর্মকাণ্ড পবিত্র কুরআন এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

তারা ‘জিহাদ’ শব্দটিকে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘ধর্ম যুদ্ধ’ বলে চালিয়ে দিতে চায়। ‘জিহাদ’ সম্পর্কে তাদের এমন ব্যাখ্যা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত যুদ্ধ এবং শান্তির নিয়মনীতির সাথে মিলে না।

সত্য কথা হচ্ছে ইসলাম সন্ত্রাস এবং নাগরিকদের প্রতি সংঘর্ষকে নিষিদ্ধ করেছে। বিশ্বব্যাপী বড় বড় ইসলামী আলেমগণ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছেন।

কিন্তু সংবাদ মাধ্যমগুলো ‘জিহাদ’ শব্দটির অপব্যাখ্যাকে বেশি বেশি প্রচার করে থাকে, অন্যদিকে তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আলেমদের মতামতগুলোকে তেমন একটা প্রচার করতে উৎসাহ দেখান না। বিশেষত পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ইসলামকে সন্ত্রাসবাদের সাথে মিলিয়ে ভুয়া খবর প্রচার করতে পারদর্শী হয়ে উঠেছে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ সন্ত্রাসবাদের সাথে ইসলামের যোগসূত্র খুঁজে বের করতে সচেষ্ট হন এবং এতে করে সন্ত্রাসবাদ ব্যাপক প্রচার পেয়ে যায়।

ইসলামিক স্টেটের নিয়োগ যন্ত্র

বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদীরা তাদের কৌশলগত স্বার্থের জন্য ইসলাম এবং পশ্চিমের দেশসমূহ পরস্পর ধর্ম যুদ্ধে লিপ্ত বলে প্রচার করে।

ইসলামিক স্টেট ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রচার করে যে, পশ্চিমা দেশগুলোতে অবস্থানরত মুসলিমদেরকে শীঘ্রই দুটো পছন্দের যে কোনো একটিকে বেঁচে নিতে হবে। তারা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেb- হয় মুসলিমরা ইসলামিক স্টেটের সাথে যোগ দিবে অথবা ক্রুসেডে লিপ্ত পশ্চিমা দেশ সমূহ থেকে পালিয়ে যাবে।

ইসলামিক স্টেট এভাবে মুসলিম এবং পশ্চিমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে পশ্চিমা মুসলিম তরুণদেরকে ভ্রর্তৃত্ব, নিরাপত্তা ইত্যাদির লোভ দেখিয়ে তাদের দলে ভিড়ায়।

আর অন্যদিকে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো সাধারণ মুসলিমদেরকে সন্ত্রাসী বলে প্রচার করে প্রকারান্তরে ইসলামিক স্টেটের স্বার্থকে হাসিল করতে সহায়তা কর।

উদাহরণ স্বরূপ- ২০১৫ সালে যখন যুক্তরাজ্যে সিরিয়ান অভিবাসীরা এসে ভিড় জামায় তখন বার্তা সংস্থা ডেইলি মেইল সতর্ক করে দিয়ে একটি খবর প্রচার করে যে, ‘ব্রিটেনের জন্য শত্রুদের নিকট থেকে মৃত্যুর দূত হাজির হয়েছে।’

অসাবধানী এসব প্রতিবেদনের ফলাফল

এসব সংবেদশীল বিষয়ে গণমাধ্যমগুলো যেভাবে অসাবধানী প্রতিবেদন প্রচার করে তাতে করে মুসলিম এবং অমুসলিমদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে ইসলামিক স্টেট নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্য সুবিধা তৈরি হয়।

২০১৭ সালে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় এক গবেষণায় দেখতে পায় যে, গণমাধ্যমগুলো সাধারণ মুসলিমদের সন্ত্রাসীদের সাথে এক করে সংবাদ প্রচার করে এবং এতে করে পশ্চিমা দেশগুলোতে সাধারণ মুসলিমদের উপর বিদ্বেষমূলক হামলা বেড়ে যায়।

এইসমস্ত অসাবধানী প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সমালোচনার পরে বার্তা সংস্থা সিএনএন ‘মধ্য পন্থী মুসলিম’, ‘প্রতিক্রিয়াশীল মুসলিম’, ‘ইসলাম’ এবং ‘ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’ ইত্যাদি বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এসব শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে ইসলামের মূল বার্তাটি হারিয়ে যায়।

বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হয়ে যেসব যোদ্ধা লড়াই করছেন তাদের ১,২০০ জনের উপর পরিচালিত সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, তাদের ৮৫ শতাংশই ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত নয়।

রাজনৈতিক শুদ্ধিকরণ নাকি সামান্য আলোচনা?

ইসলামিক স্টেট নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটিকে অবৈধ প্রমাণ করার জন্য যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স সরকার বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রচার চালিয়ে যায় এবং তারা ইসলামিক স্টেটকে ‘দায়েশ’ শব্দটি দ্বারা ব্যাখ্যা করে। তবে এধরনের উদ্যোগ সচরাচর দেখা যায় না।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত রাজনীতিবিদেরা এখনো ইসলাম এবং ইসলামইজমকে এক করে ফেলেন। তিনি সাধারণত ‘প্রতিক্রিয়াশীল ইসলামী সন্ত্রাসী’ এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করতে অভ্যস্ত।

কিন্তু যারা মনে করেন সমস্যা ইসলাম ধর্ম থেকেই এসেছে তার ভুল করছেন। ইসলামী মূল্যবোধ সম্পর্কে আমাদেরকে অবশ্যই গঠনমূলক আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের সবাইকে একটা বিষয় পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে যে, অমুসলিমদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়ানোর কোনো ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নেই এমনকি ইসলাম এসবের বৈধতা দেয় না।

সমাজে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যে উদ্বিগ্নতা রয়েছে তা দূর করার জন্য কার্যকরী পন্থা গ্রহণ করতে হবে। ইসলাম এবং ইসলামইজমের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরার বিষয়ে সকলের নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। অন্তত আমরা যাতে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এসকল বিষয় তুলে ধরতে পারি সে ব্যাপার সচেষ্ট হতে হবে। দ্যা কনভারসেশন ডট কম।

captcha