IQNA

সাংবাদিক খাশোগি হত্যা রহস্য উন্মোচনের সূত্র হতে পারে ৪০০ মেসেজ!

18:48 - February 23, 2019
সংবাদ: 2607997
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি শুধু তার কলামেই সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচনা করেননি, ব্যক্তিগতভাবে আদানপ্রদানকৃত বেশ কিছু মেসেজেও তার অবস্থান ছিল একইরকমের। কানাডায় নির্বাসিত এক সৌদি অ্যাকটিভিস্টের কাছে পাঠানো ৪০০-রও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে সৌদি যুবরাজ সম্পর্কে বার বার সতর্ক করতে দেখা গেছে তাকে।

বার্তা সংস্থা ইকনা: হত্যার শিকার হওয়ার আগের এক বছরে অ্যাকটিভিস্ট ওমর আব্দুল আজিজকে মেসেজগুলো পাঠিয়েছিলেন খাশোগি। এসব মেসেজে, সৌদি যুবরাজকে প্রায়ই জানোয়ার ও গ্রাসকারী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করতেন তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে। এ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজগুলো খাশোগি হত্যা রহস্য উদঘাটনের সূত্র হতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

খাশোগি একসময় সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি যুবরাজের কঠোর সমালোচকে পরিণত হন। গ্রেফতার এড়াতে দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান খাশোগি। দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গত ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে হত্যার শিকার হন তিনি।

প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে সৌদি আরব জানায়, ইস্তানবুলের কনস্যুলেটে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে খুন হন তিনি। এ ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও ওঠে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ সে অভিযোগ নাকচ করে আসছে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান খাশোগি হত্যার ঘটনায় সরাসরি সৌদি যুবরাজকে দায়ী না করলেও তিনি দাবি করেছেন, সৌদি আরবের ‘শীর্ষ পর্যায়’ থেকে হত্যার নির্দেশ এসেছে।

হত্যার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও খাশোগি হত্যা রহস্যের সুরাহা এখনও হয়নি। এরমধ্যেই কানাডায় নির্বাসিত সৌদি অ্যাকটিভিস্ট ওমর আব্দুল আজিজকে খাশোগির পাঠানো চার শতাধিক মেসেজ হাতে পেয়েছে সিএনএন। আব্দুল আজিজই মেসেজগুলো সিএনএন-কে দিয়েছেন।

সিএনএন-এর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই মেসেজগুলোতে খাশোগি সৌদি যুবরাজের সমালোচনা করেছেন। যুবরাজকে নিয়ে শঙ্কা ছিল তার। একটি মেসেজে তাকে বলতে দেখা গেছে ‘যত বেশি শিকার করতে পারেন, ততো বেশি তার (সৌদি যুবরাজ) শিকারের আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়।’

আরেকটি মেসেজে সৌদি যুবরাজ সম্পর্কে খাশোগি লিখেছেন, ‘তিনি জোরজবরদস্তি, দমন-পীড়ন পছন্দ করেন এবং সেগুলো দেখানোর প্রয়োজনবোধ করেন, তবে অত্যাচারের পেছনে কোনও যুক্তি থাকে না।’

খাশোগির সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত যোগাযোগের বিষয়গুলো নভেম্বরে প্রকাশ করেন আব্দুল আজিজ। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যখন জানালেন, আব্দুল আজিজের মোবাইল ফোন হ্যাক হয়েছে এবং সামরিক গ্রেডের স্পাইওয়্যার দিয়ে তা করা হয়েছে, তখনই বিষয়টি প্রকাশ করেন এ অ্যাকটিভিস্ট। ওই স্পাইওয়্যারটি উদ্ভাবন করেছে ইসরাইলি কোম্পানি এনএসও।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটিজেন ল্যাবের গবেষককে উদ্ধৃত করে সিএনএন জানায়, ওই সফটওয়্যারটি সৌদি সরকার স্থাপন করেছে। স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা অন্তত দুই ব্যক্তিকে নিশানা করতে এটি মোতায়েন করা হয়েছিল। আব্দুল আজিজের ফোনে হ্যাক হওয়ায় সন্দেহ করা হচ্ছে, সৌদি কর্মকর্তারা খাশোগির মেসেজগুলো আগেই পড়ে ফেলেছিলেন।

রবিবার (২ ডিসেম্বর) ইসরাইলি ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আব্দুল আজিজ। সিএনএন-কে তিনি বলেন, ‘জামালের সঙ্গে যা হয়েছে সেক্ষেত্রে আমার ফোন হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি বড় ভূমিকা রেখেছে। এ কথা বলতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এ অপরাধবোধ আমাকে শেষ করে দিচ্ছে।’

সিএনএন-এর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল প্রতিরোধের পরিকল্পনা করেছিলেন খাশোগি ও আব্দুল আজিজ। ‘সাইবার বীস’ নামে একটি পোর্টাল খুলতে চেয়েছিলেন তারা। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত নথি প্রকাশ ও শর্ট ফিল্ম প্রচারের পরিকল্পনা ছিল এ দুই ব্যক্তির। আব্দুল আজিজের সঙ্গে আলাপচারিতাগুলো হ্যাক হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন খাশোগিও। আজিজকে সতর্ক করে তিনি লিখেছিলেন, ‘বীস সম্পর্কে ইন্সটগ্রামেও আলোচনা করবেন না।’ bdlive24

captcha