IQNA

এক খ্রিষ্টান ড্রাইভার ও ইমাম হুসাইন (আ.)এর কাহিনী

14:38 - October 10, 2017
সংবাদ: 2604031
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০১৭ সালে মহররম মাসের একদিন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত অস্ট্রিয়ায়ও ইমাম হুসাইন (আ.)এর আজাদারী পালন করা হচ্ছিল।
অস্ট্রিয়ার এক খ্রিষ্টান ড্রাইভার ও ইমাম হুসাইন (আ.)এর কাহিনী

বার্তা সংস্থা ইকনা: নীচের গল্পটি একটি সত্য কাহিনী, যা ২০১৭ সালের মহররম মাসে অস্ট্রিয়ার একটি শহরে এক শিয়া যুবককে নিয়ে ঘটেছে।

এক যুবক তার মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হওয়ার জন্য মানত করেন।

আন্তরিকতার সঙ্গে আশুরার শোকানুষ্ঠান উদযাপনের জন্য নিজে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরমাধ্যমে হয়তবা বরকত লুকিয়ে রয়েছে।

যুবক একটি পাত্রে খাদ্য রান্না করে এবং সে নিয়ত করে আজাদারীর স্থানে নিয়ে যায়। আজাদারীর স্থানে যারা নওহা ও মাতম করছিল তাদের মধ্যে এই খাদ্য বিতরণ করবে বলে সে নিয়ত করে।

তিনি অনেক অর্থবান নন। তারপরও আজাদারীর স্থানে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য তিনি একটি ট্যাক্সি ভারা করেন।

ট্যাক্সিতে করে যাচ্ছিলেন। ট্যাক্সির ড্রাইভার উজ্জ্বল চোখের অধিকারী ছিলেন। দেখে বোঝা যাচ্ছিলো যে, তিনি অস্ট্রিয়ার স্থানীয় অথবা প্রতিবেশী কোন দেশের অধিবাসী। ট্যাক্সিতে ঝুলন্ত ক্রস দেখে যুবক বুঝলেন যে, লোকটি খ্রিস্টান।

ড্রাইভারকে যুবক সালাম করল এবং ড্রাইভার মৃদু হেসে সালামের উত্তর দিলেন। গাড়িতে ওঠার পূর্বে যুবক খাদ্যের পাত্রটি গাড়ির পিছনের সিটে রাখার অনুমতি চাইলে ড্রাইভার তার অনুমতিতে সম্মতি প্রদান করেন। পথমধ্যে ড্রাইভার আবারও গন্তব্যস্থানের সঠিক ঠিকানাটি চাই। ড্রাইভারের গতিবিধি দেখে যুবক বুঝতে পারে যে পাত্রে মধ্যে কি রয়েছে তা জানতে ড্রাইভার আগ্রহী। কিন্তু অস্ট্রিয়ার নিয়ম হচ্ছে যাত্রীর নিকটে ড্রাইভার কোন প্রশ্ন করতে পারবে না। যুবক বিষয়টি বুঝতে পেরে সে নিজেই কথা বলা শুরু করল।

যুবক বলল: আমার সমস্যা রয়েছে এবং যেহেতু আমি ধর্মকে বিশ্বাস করি আমার সমস্যাগুলো মহান আল্লাহ বিবেচনা করবেন। তার অনুমতিতে যারা সাধু এবং নেক বান্দা তাদেরকে ওসিলা হিসেবে নির্ধারণ করেছি। যতেকরে আমার সদস্যা সমাধান হয়।

ড্রাইভার তার কথা অতি মনোযোগ সহকারে শুনছিল। ড্রাইভার বললো: এ ব্যাপারে আরও বেশী ব্যাখ্যা দাও। তখন যুবক ইমাম হুসাইন (আ.)এর কারবালার কাহিনী বর্ণনা করে বলেন, আমি তাঁর ওসিলা দিয়ে মানত করেছি, যাতে করে আল্লাহ আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করেন।

ড্রাইভার যুবকের কথা শুনতে শুনতে বলল: হ্যাঁ! হ্যাঁ! আমি হুসাইনকে চিনি। বেশ কয়েক বছর পূর্বে ভিয়েনায় তার নাম শুনেছি। তার বিষয়ে আমি বই পড়েছে। তিনি আমারদের মাসিহ [ঈসা (আ.]-এর মতো মানবতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি তাকে বিশেষ সম্মান করি। তাঁর শহীদের ঘটনা আমার হৃদয়কে মর্মাহত করে। কারবালার কাহিনী পড়ার সময় মাসিহ'র কথা স্মরণে আসে। তাঁর জীবন দেয়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন (১)

এই কথা বলতে বলতে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যান এবং যুবক গাড়ীর ভাড়া দিতে চাইলে ড্রাইভার তার নিকট থেকে ভাড়া না নিয়ে বলেন: আমাকেও তোমার মানতের সাওয়াবের অংশীদারি করো!!!

এই বলে তিনি গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজা খুলে দেয়, যাতে করে যুবক অতি সহজে খাদ্যের পাত্রটি গাড়ি থেকে বের করতে পারে।

হয়তবা অন্য কোন যাত্রীর কথা ড্রাইভারের নিকট এমন প্রভাব বিস্তার করেনি! হয়তবা তিনি হযরত ঈসাকে যুবকের কথার মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন! আল্লাহ সর্বশক্তিমান, হয়তবা তিনি ২০১৮ সালের মহররম মাসে ইমাম হুসাইন (আ.)এর জন্য মাতম করবেন এবং তাঁর পতাকার নীচে এসে দাঁড়াবেন।

শিয়া যুবক তাকে বলেন, আশুরার পরের শনিবারে দ্বিতীয়বারের মতো ইমাম হুসাইন (আ.)এর জন্য শোক মিছিল বের করবো এবং হুসাইন (আ.)এর চেনার জন্য এই মিছিলে অংশগ্রহণ করার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানায়। ড্রাইভার আগ্রহের সাথে বলেন: আমি এই মিছিলে আসবো।

তিনি বুঝতে পেরেছেন, অন্যান্য ধর্মের নেতাদের সাথে ইমাম হুসাইন (আ.)এর অনেক পার্থক্য রয়েছে; মুক্তির তরী এবং হেদায়েতের বাতি হয়ে ইমাম হুসাইন (আ.) এসেছেন। তাকফিরি, সন্ত্রাসী এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে ইমাম হুসাইন (আ.) রুখে দাঁড়িয়েছেন। মানুষের চোখের সাথে তার কোন কাজ নেই, মানুষের হৃদয়ের সাথে তার সকল কাজ। হুসাইনের আহ্বান মানুষকে ন্যায়, মানবতা ও রহমতের দিকে ধাবিত করে।

১- পলিসির মতে, হযরত ঈসা (আ.)এর ক্রুশে নিহত হওয়ার বিষয়টি হচ্ছে, হযরত আদম (আ.)এর গুনাহরে কাফফারা দিয়ে হযরত ঈসা (আ.) নিজের জীবন উৎসর্গ করেন এবং এর মানবজাতিকে রক্ষা করেনে। মুসলমানদের দৃষ্টিতে উল্লেখিত মন্তব্য সঠিক নয়। মূলত হযরত ঈসা (আ.) ক্রুশে নিহত হননি। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে সূরা নিসার ১৫৭ ও ১৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

"এবং তাদের এ কথার জন্য যে, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম-তনয় ঈসা-মসীহকে হত্যা করেছি, অথচ না তারা তাকে হত্যা করেছে, আর না তাকে ক্রুশবিদ্ধ করেছে; বরং (অপর একজনকে তাঁর অনুরূপ করার ফলে) বিষয়টি তাদের জন্য সন্দিগ্ধময় হয়েছিল এবং নিশ্চয় যারা এ (তাকে হত্যার) ব্যাপারে মতানৈক্য করেছে, তারা সে বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে রয়েছে; আর এ বিষয়ে অনুমানের অনুসরণ ভিন্ন তাদের কোন জ্ঞানই নেই এবং নিঃসন্দেহে তারা ঈসাকে হত্যা করেনি। (১৫৮) বরং আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন; বস্তুত আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।"

iqna


captcha