IQNA

হিজাব অপসারণে নিউইয়র্ক পুলিশের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মুসলিম নারীর মামলা

23:39 - March 17, 2018
সংবাদ: 2605285
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০১৭ সালের জানুয়ারির এক সন্ধ্যায়, ম্যানহাটানের একটি পুলিশ সেলে জামিলা ক্লার্ককে কয়েক ঘন্টা আটক রাখা হয়েছিল। ওই সময় তার হিজাব সরিয়ে ফেলার জন্য তাকে বারবার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।



বার্তা সংস্থা ইকনা: পুলিশের এমন নির্দেশে জামিলা ক্লার্ক (৪৯) কাঁদতে শুরু করেন। তারপর, তিনি নিজেকে কিছুটা সামলে নেন এবং নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ অফিসারকে হিজাব ছাড়াই খোলা মাথায় ছবি তুলতে দিলেন।

পুলিশের ডাটাবেসে সংরক্ষণ করার জন্য পরে বেশ কয়েকজন পুরুষ অফিসার তার খোলা মাথার ছবি তুলতে শুরু করেন। সেই অভিজ্ঞাতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি জানান, তার দিকে ক্যামেরার ফ্লাস হতেই তার কাছে অনুভূত হয়েছিল, যেন তাকে নগ্ন করা হয়েছে।

গত আগস্টে ৪৫ বছর বয়সী আরোয়া আজিজও ব্রুকলিনের একটি পুলিশ ভবনে একই রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। আনুষ্ঠানিক গ্রেপ্তারের ছবি তোলার জন্য পুলিশ কর্মকর্তারা তার হিজাব টেনে খুলে ফেলেন। শুধু তাই নয়, ছবি তোলার জন্য তাকে কয়েক ডজন পুরুষ বন্দিদের সঙ্গে একত্রে দাঁড় করানো হয়েছিল।

পুলিশ কয়েকটি অ্যাঙ্গেল থেকে তার খোলা মাথা ও চুলের ছবি তোলে। এই অবস্থায় আরোয়া আজিজ কাঁদতে থাকেন। উপস্থিত অন্য পুরুষ বন্দিরা তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তাকে সান্তনা দিয়েছেলেন।

যাইহোক, একজন পুলিশ অফিসার তাকে বলেছিলেন, ‘এটাই আইন।’

এই নারীদের বিস্তারিত বর্ণনা নিয়ে শুক্রবার একটি ‘ক্লাস-অ্যাকশন’ নাগরিক অধিকার সংস্থা ম্যানহাটানের জেলা আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার আর্জিতে বলা হয়, গ্রেপ্তারকারীদের ছবি তোলার জন্য হিজাব অপসারণে বাধ্য করা নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের এই নীতি যে কোনো বেসামরিক নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকারের লঙ্ঘন। এটি মুসলিমদের হিজাব, অর্থডক্স খ্রিস্টান বা ইহুদিদের স্কালক্যাপ, শিখদের পাগড়ি এর ক্ষেত্রেও লঙ্ঘন বলে এতে বলা হয়।

নিরাপত্তা বিধি ভঙ্গের অভিযোগে জামিলা ক্লার্ক (৪৫) এবং আরোয়া আজিজ (৪৫ ) কে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছিল; যা পরে প্রসিকিউটরদের দ্বারা মীমাংসা করা হয়েছিল।

স্থানীয় পুলিশের এই নিয়ম মিশিগান ও মিনেসোটা সহ দেশটির অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গৃহীত নিয়মের বিপরীত।

আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স কাউন্সিলের নিউইয়র্ক চ্যাপটারের আইনি পরিচালক ও ফেডারেল মামলায় নারীদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী আলবার্ট ফক্স কাহন বলেন, ‘হিজাব ছাড়া তাদের ফটোগ্রাফ নেয়ার জন্য বাধ্যকরার মাধ্যমে তাদের গোপনীয়তার অনুভূতি লঙ্ঘন, তাদের মর্যাদার অনুভূতির লঙ্ঘন এবং একই সঙ্গে এটি তাদের আন্তরিক ধর্মীয় বিশ্বাসের লঙ্ঘন করে।’

মামলায় ফটোগ্রাফ নীতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতির দাবি ছাড়াও পুলিশের এই নীতিমালা অনুসরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

কাহন বলেন, ‘এই ছবিগুলো সরকারি কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা হতে পারে এবং পেপার কোর্ট ফাইলের কারণে তা বারবার খুটিয়ে দেখার কারণে এটি মানসিক আঘাতের একাধিক পুনরাবৃত্তির জন্ম দিতে পারে।’

শহরের আইন বিভাগের একজন মুখপাত্র নিকোলাস পাওলোসি দাবি করেন, ‘আমরা এই অভিযোগ পুনর্বিবেচনা করবো। তবে আমরা নিশ্চিত যে পুলিশ বিভাগের ধর্মীয় হিজাব পলিসিতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সব ধর্মের কাস্টমস অনুযায়ী আমরা যত্ন সহকারে গ্রেপ্তারকৃতদের ছবি ফটো নিয়ে থাকি। যারা অন্যের সামনে মাথা থেকে হিজাব খুলতে চান না, তারা আলাদা বা আরো গোপনে তাদের ছবির তোলার বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন।’

ধর্মীয় বিশ্বাস পালনের অংশ হিসেবে অনেক মুসলমানের মতোই মিসেস ক্লার্ক এবং মিসেস আজিজ পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্যদের সামনে তাদের মাথা ও চুলকে আচ্ছাদিত করে রাখেন। পুলিশের এই নীতির বিরুদ্ধে কুইন্স ভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নারীদের জন্য ও তাদের পরিবারের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট।

কাহন এবং অলাভজনক সংস্থার আইনজীবী এমেরি সেলি ব্রিংকারহোফ মনে করেন, পুলিশের এই চর্চা অযৌক্তিক এবং আমেরিকার প্রথম সংশোধনী ও ফেডারেল আইন অনুযায়ী তার ফরিয়াদির ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন। নিউইয়র্ক টাইমস

captcha